Indian Pitta, দেশি শুমচা, नवरंग, Pitta brachyura.

INDIAN PITTA FACTS

যে পাখির ছবি তুলে আমি এই নেশায় আসক্ত হয়ে ছিলাম তাকে নিয়েই আমার আজকের ডায়েরি লেখা। Indian Pitta , দেশি শুমচা,  বর্ণালী, বিজ্ঞান সম্মত নাম Pitta brachyura, হিন্দিতে নবরঙ্গ। সাল 2016 প্রথম এই পাখির ডাক আমাকে আকৃষ্ট করে, তার সাথে ছিল রঙের বাহার । যারা পাখির ছবি তোলেন তাঁঁদের wish list  এর একদম ওপরের দিকেই থাকে এই পাখির স্থান। যতবারই এর ছবি তুলে থাকুননা কেন , বারবার চুম্বকের মত টানে । প্রথম যেদিন এই পাখিটিকে আমাদের বাড়ির পিছনের বাগানে দেখতে পাই ঠিক তার পরের দিন থেকে দূর-দূরান্তের অনেক দাদা দিদি এই পাখির ছবি তুলতে আমার বাড়ি এসেছিলেন। তাঁদের এই উন্মাদনা দেখেই আমার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে  গিয়েছিল। তখন আমার ছোট লেন্স, পাখিও ছোট, তাই খুব ভাল ছবি না হলেও যেহেতু পাখিটা ছিল আকর্ষণীয়, তাই আমিও  ছবি তুলতে আগ্ৰহ পাই। বাড়ির ছাদ থেকেও বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছিলাম মনে আছে।

আবাস স্থল ও বিচরণক্ষেত্র , Indian Pitta habitat & distribution : শীতকালে দক্ষিণ ভারতে এবং গ্রীষ্মকালে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে পশ্চিমে মহারাষ্ট্র ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। হাওড়া জেলায় আমার Uluberia Outskirts - এ প্রথমে আমার বাড়ির পিছনে (উদয়নারায়ণপুর থানার, দেবীপুর গ্ৰাম) এবং পরের বছর আমতার সন্নিহিত অঞ্চলে এই পাখিটির ছবি তুলেছি। এই সমস্ত অঞ্চলে মূলত পরিযানের সময় বিশ্রাম নিতেই দেখা যায়। খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন এই অঞ্চলে থাকতে দেখেছি। এর পর শাল, সেগুন, ইউক্যালিপটাস গাছের ছোট বড় জঙ্গলে চলে যায় প্রজননের জন্য। 2016, 2018, 2019 তিন বছর এদের চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণের নিরিখেই আমার এই লেখা।

পাখিটার স্বভাব চরিত্র, Indian Pitta behavior : পাখিটি উঁচু গাছের ডালে থাকার চেয়ে গাছের নিচে ছায়া যুক্ত অঞ্চলে থাকতেই পছন্দ করে । একবারে  টানা বেশি দূর উড়তে পারে না, মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। লাফিয়ে কিছুটা গিয়ে থেমে এদিক-ওদিক তাকায়। সামনে কোন ছোট ঢিপি বা ছোট ডাল থাকলে তার ওপর উঠে চারপাশ দেখে আবার কিছুটা এগিয়ে যায়। খুব একটা লাজুক নয়, মানুষের কাছাকাছি আসতে তেমন ভয় পায় না।

শারীরিক গঠন, Physical description of Indian Pitta : পাখিটার আকার 10 -12 সেন্টিমিটার বা 4 - 5 ইঞ্চি। চোখের পাশ থেকে ঘাড় পর্যন্ত কালো রেখা মনে হয় যেন কাজল পরে আছে। মাথায় বাদামি ও কালো রেখা, গলা সাদা, বুকের কাছে হালকা বাদামি, পেটের কাছে vent গাঢ় কমনা লাল। পিঠের ডানা সবুজ তার ওপর ফিরোজা নীল রঙের পালক থাকে। ওড়ার সময় ঐ ফিরোজা নীল রঙের ও সাদা পালক স্পষ্ট চোখে পড়ে। ডানার নিচের দিকে আকাশী নীল রং থাকে, পা গোলাপি রঙের , ঠোঁট কালো ছোপ । স্ত্রী এবং পুরুষ পাখি বাইরে থেকে দেখতে একই, তবে ঠোঁটের রঙে সামান্য পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হয়। স্ত্রী পাখির ঠোঁট তুলনামূলক হালকা কালো রংয়ের হয়। লেজ নেই বললেই চলে, মাটিতে হাঁটার সময় সামান্য নাড়ালে তবেই বোঝা যায় সামান্য লেজ আছে। গায়ে নয় রকমের রঙ আছে বলেই হিন্দিতে একে বলা হয় 'নবরঙ্গ'।  ডাক দেবার সময় ঘাড় টা ওপর দিক করে দুটি ছন্দে ডাকে,  ক্যাক.... ক্যাও...

 [ শরীরের নয় ধরনের রঙ দেখানো হল ]

   [ ডাক দেবার Signature Pose

খাদ্য, Food habit of Indian Pitta :
বন জঙ্গলের ছায়াযুক্ত অঞ্চলে মাটিতে নেমে মূলত শুকনো পাতা উল্টে উল্টে পোকামাকড় ধরে খায়। এছাড়াও অঙ্গুরীমাল প্রাণী, ছোট ব্যাঙ তাদের খাবার। Indian Pitta কিভাবে মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে শুকনো পাতা উল্টে খাবার সংগ্রহ করে তার একটা সুন্দর ভিডিও এখানে দিলাম, লিঙ্ক এ ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন।


প্রজনন, Breeding of Indian Pitta : 
মে থেকে জুলাই এদের প্রজননের সময় । মজবুত গাছের ডালে মাঝারি উচ্চতায় ঘাস ও শুখনো পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে। ডিম পাড়ে 4-5 টি, ডিম ফুটে বাচ্ছা বের হতে সময় নেয় 15-20 দিন। সপ্তাহ দেড় দুয়েকের মধ্যেই বাচ্ছা বাসা ছেড়ে মাটিতে নেমে আসে। বিপদ বুঝলে গাছ থেকে মা/বাবা  বিশেষ ধরনের আওয়াজ করে বাচ্ছাকে সব সময় সতর্ক করে রাখে এবং সেই সময় বাচ্ছা ঘন ঝোপের ভিতর ঢুকে যায়।

ছবি তোলার অভিজ্ঞতা, Photographic experience : আগেই বলেছি এই পাখির ছবি তোলার মধ্যে দিয়েই আমার এই নেশার সূত্রপাত।  2016 সালের মে মাসে আমাদের বাড়ির পিছনের বাগান থেকে প্রথম এর ছবি তুলি, সেই ছবি দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং কয়েকজন ঘনিষ্ঠ দাদা দিদি আমার বাড়ি এসেছিলেন এই পাখির টানে । 2017 সালে আমার উলুবেরিয়ায় এর দেখা পাইনি। 2018 সালের এপ্রিল মাসের 19 তারিখ, পাখির আশাায় বসে আছি, আর মনে মনে ভাবছি যদি পিট্টার দেখা পাই, ঠিক ঐ পরিস্থিতিতে পাখিটার ডাক শুনতে পাই। হিন্দি সিনেমা " Om Shanti Om" এ একটা ডাইলগ আছে *****कहते है अगर किसी चीज को दिल से चाहो तो पूरी कायनात उसे तुमसे मिलाने की कोशिश में लग जाती है***** অর্থাৎ মন প্রাণ দিয়ে যদি কিছু চাও, সমগ্ৰ শক্তি তোমাকে সেটা পাইয়ে দিতে কাজে লেগে পরে। সত্যি বলছি গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। ব্যাস শুরু হয়ে গেল ছবি তোলা। মোটামুটি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আমার এই উলুবেড়িয়া সংলগ্ন এলাকা দিয়েই নির্দিষ্ট গন্তব্যে যায়। মাঝপথে এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন এই এলাকায় বিশ্রাম নিয়ে নেয়। ঐ বছর অসংখ্য ছবি ও ভিডিও তুলেছিলাম। আবার 2019, আমি এবং কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্ত্তী দাদা একসাথে বেড়িয়েছিলাম ছবি তুলতে, একাটা দামা দেখেতে পেলাম, দামা (Orange headed thrush) যেখানে দেখা যায় সেই Habitat এ পিট্টা দেখতে পাওয়ার সম্ভবনা প্রবল থাকে। আমি কৃষ্ণেন্দু দা কে বললাম এখানে পিট্টা পাওয়া যেতে পারে। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করলাম, যা বলা তাই, একদম মাথার কাছেই একটা গাছে এসে পিট্টা হাজির। যদিও ছবি খুব একটা ভাল হয়নি, কিন্তু ঐ পাখি যে ভাবে ঘাড় উঁচু করে ডাক দেয় তার একটা ছবি তুলেছিলাম। ভীষণ খুশি , পরের দিন সেখানে কিংশুক হাজরা দা কে নিয়ে গেলাম , কিন্তু দেখা পেলাম না। 2020 তে সেই এপ্রিল থেকে অপেক্ষা করেও, আর পিট্টা এল না 😥। চারিদিকে কোভিডের জন্য লকডাউন, তাই কোথাও যেতেও পারলাম না। আশা করি 2021 সালে আবার এপ্রিল-মে মাস নাগাদ আমাকে দেখা দিতে আসবে,  এই আশাতেই আছি।



[এই পাখিটা ওপরে অন্য পাখিটার সাথে এক জায়গায় পেয়েছি (Couple) ঠোঁঁটের রঙ একটু আলাদা ]

[ওড়ার সময় ডানায় থাকা ফিরোজা নীল ও সাদা রঙের পালক পরিস্কার বোঝা যায়]



{সংরক্ষণ অবস্থা : ন‍্যূনতম বিপদগ্ৰস্থ}



***👇লেখাটি পড়ে ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার কমেন্ট করুন। আপনার এই মূল্যবান মন্তব্য আমার পরবর্তী লেখার প্রেরণা।👇***

Comments

  1. Replies
    1. খুব সুন্দর উপস্থাপনা। সব থেকে ভালো লাগলো একটি বন্যপ্রাণের সাথে আপনার আবেগের অন্তরঙ্গতা।
      এই উপস্থাপনাটির link আপনার ভাই, সৌরভের থেকে পাওয়া।
      এভাবেই একাত্ম হয়ে থাকুন আপনার ভালবাসার বিষয়ের সাথে এই আশা রাখি

      Delete
    2. অসংখ্য ধন্যবাদ☺️

      Delete
  2. দারুণ লাগলো

    ReplyDelete
  3. অপূর্ব সুন্দর লেখা। ছবি তার সৌন্দর্য অনেক কৃতিত্বের দাবী রাখে। পাখিটি সম্বন্ধে একটা সম্পূর্ণ ও informative লেখা পড়লাম। ভিডিওটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তোমার প্রচেষ্টাকে আন্তরিক অভিনন্দন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. দাদা অসংখ্য ধন্যবাদ 🙏

      Delete
  4. দাদা, আর একটা দারুন তথ্য পেলাম

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ 💗☺️

      Delete
  5. অপূর্ব লেখা, খুব সুন্দর ছবি সহযোগে সুন্দর বর্ণনা 😍👌

    ReplyDelete
  6. অপূর্ব লেখা, খুব সুন্দর ছবি সহযোগে সুন্দর বর্ণনা 😍👌

    ReplyDelete
  7. ব্যাপক। দারুণ লিখেছো। সাথে ছবিগুলো দুর্দান্ত ইলাস্ট্রেশন হিসাবে কাজ করছে। দারুণ।

    ReplyDelete
  8. ব্যাপক। দারুণ লিখেছো। সাথে ছবিগুলো দুর্দান্ত ইলাস্ট্রেশন হিসাবে কাজ করছে। দারুণ।

    ReplyDelete
  9. ব্যাপক। দারুণ লিখেছো। সাথে ছবিগুলো দুর্দান্ত ইলাস্ট্রেশন হিসাবে কাজ করছে। দারুণ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ 💗☺️

      Delete
    2. Awesome. ... Complete documentation with lots of high quality photos... Very nice 👍🙏🏻👌🏻❤

      Delete
  10. Amazing photography & fantastic write-up .

    ReplyDelete
  11. Enhorabuena Ambar, a mi tambien me encantan las Pitta, saludos

    ReplyDelete
    Replies
    1. Te envié una solicitud de amistad después de ver tu colección pitta. Gracias por tu apreciación🙏

      Delete
  12. অসাধারণ ছবি ও লেখা 🖤

    ReplyDelete
  13. এই লেখা টা দারুন আর সঙ্গের ছবি গুলো ও । এবারে হার্ডকপি ম্যাগাজিনে দেখতে চাই ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

      Delete
  14. এই লেখা টা দারুন আর সঙ্গের ছবি গুলো ও । এবারে হার্ডকপি ম্যাগাজিনে দেখতে চাই ।

    ReplyDelete
  15. কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। বাংলায় এ পাখির এতো বিস্তৃত বিবরণ আমি আর পড়িনি।

    ReplyDelete
  16. crisp detailing .

    ReplyDelete
  17. অসাধারণ লেখা সাথে অনেক নতুন জিনিস জানা হোলো. অনেক ধন্যবাদ দাদা 🙏

    ReplyDelete
  18. Very comprehensive write up . Thanks for presenting

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Brown Fish Owl, ভুতুম পেঁচা, Ketupa zeylonensis .

Chestnut-capped Babbler (লালটুপি ছাতারে) Timalia pileata.