Brown Fish Owl, ভুতুম পেঁচা, Ketupa zeylonensis .

Brown Fish Owl Facts

নেক পাখিই মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙার। পেঁচাও মাছ খায়, ঠিকই শুনেছেন পেঁচাও রীতিমত জল থেকে মাছ ধরে খায়। যারা পাখি নিয়ে চর্চা করেন বা পাখির ছবি তোলেন তাঁঁরা ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই পেঁচা বলতে কেবল লক্ষ্মীপেঁচা ও কোঠরে  পেঁচাকেই চেনেন, কিন্তু আমার উলুবেড়িয়া সংলগ্ন এলাকাতেই আমি চার প্রকার পেঁচার ছবি তুলেছি। উলুবেড়িয়ার পেঁচা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব অন্য কোন সময়। আজ আমি যে পেঁচাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি একটি মাছ খেকো পেঁচা। Brown Fish Owl , ভুতুম পেঁচা,  বিজ্ঞানসম্মত নাম Ketup zeylononsis. আমার Uluberia Outskirts এ পাওয়া পাখির মধ্যে আরো একটি মূল্যবান সম্পদ এই ভুতুম পেঁচা। বাংলা নামের সাথে পেঁচাটির অনেক মিল আছে । কারণ রাতের অন্ধকারে কোন শুনশান জায়গা দিয়ে যাবার সময় যদি এই প্যাঁচার ডাক শোনেন তাহলে গায়ে কাঁটা দেবেই। বেশ ভারী গলায় কিছুটা সময়ের ব্যবধানে কখনো হু - হু - হু  আবার কখনো ভুত্ - ভুত্ -  ভুতম করে ডাক দেয়। চোখের চাহুনিও যে কোনো মানুষের কাছে ভয়ের কারণ হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে পেঁচাটি ভীষণ নিরীহ ও মানুষের উপকারী।




আবাসস্থল ও বিচরণক্ষেত্র , Brown Fish Owl Habitat & Distribution :  Brown Fish Owl বা ভুতুম পেঁচা ভারতের অধিকাংশ জায়গাতেই কম বেশি পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া সংলগ্ন দুটি অঞ্চলে এর অস্তিত্বের কথা আমি জেনেছি। একটি আমতা অপরটি উদয়নারায়ণপুরের সন্নিহিত অঞ্চলে। নদী, খাল, বিল, পুকুর সংলগ্ন বড় বড় গাছ যুক্ত জঙ্গলে, জলাশয়ে হেলে থাকা গাছের ডালে এদের বিচরণ। প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট গাছের কোঠরে এবং পুরানো বাড়ির ছায়া যুক্ত নিরিবিলি জায়গায় এরা  আশ্রয় নেয়।



ভুতুম পেঁচার স্বভাব-চরিত্র Brown Fish Owl Behavior : পাখিটি নিশাচর হওয়ায় দিনের বেলা খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। দিনের বেলা গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। যদি কোনো কারণে ঝোপের বাইরে চলে আসে , তাহলে অন্যান্য পাখি ; বিশেষ করে বুলবুলি, ছাতারে, ফিঙে , কাক, পেঁচাটির পিছনে পরে যায়, ও কিচিরমিচির করতে থাকে। যদিও তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। ওড়ার পাশাপাশি গাছের ডালে এরা স্বচ্ছন্দে হাঁটাচলা করতে পারে।


শরীরের গঠন, Brown Fish Owl Physical Description  :  শরীরের আকার ১৮ থেকে ২২ ইঞ্চি বা ৪৮ থেকে ৫২ সেন্টিমিটার এবং ওজন দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি হয় । স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় আকারে একটু ছোট হয়, এছাড়া স্ত্রী-পুরুষ পার্থক্য বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না। চোখের গোলক উজ্জ্বল হলুদ রঙের। পিঠের দিকে পালকের রঙ গাঢ় বাদামী এবং তার ওপর কালো ও সাদা রঙের দাগ । বুকের সামনের দিকটা অনেকটা হালকা রঙের হয় এবং তার ওপর কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। Bill বা চঞ্চু হালকা সবুজ রঙের হয় । এদের গলার হাড়ের গঠন এমন হয় যে ঘাড় ঘুরিয়ে একদম পিছনের দিকে তাকাতে পারে । এর ফলে জায়গা পরিবর্তন না করেই অনেকটা অঞ্চলের শিকারের ওপর নজর রাখতে পারে। পায়ের রঙ হালকা হলদে, পায়ে কোন পালক থাকে না। পায়ে বড় বড় বাঁকানো নখ থাকে , যা দিয়ে সহজেই জল থেকে মাছ ধরতে পারে।



খাদ্য, Brown Fish Owl Food Habit : অন্যান্য পাখি ওড়ার সময় ডানা ঝাপটানোর শব্দ পাওয়া যায়, কিন্তু এই পেঁচা ওড়ার সময় কোনো শব্দ শোনা যায় না। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য শিকার ঘুণাক্ষরেও টের পায়না, তাই সহজেই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার করতে পারে। এদের প্রধান খাবার হল মাছ। জলাশয়ের পাশের বড় গাছের ডালে চুপ করে বসে জলাশয়ে তাক করে বসে থাকে , মাছ দেখতে পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুধুমাত্র পায়ের নখ দিয়ে জল থেকে মাছ তুলে নিয়ে আবার গাছে চলে আসে । এরা জলে ঝাঁপ দিলেও শরীরের অন্য অংশ ভেজে না। Osprey বা মাছমারুল যেমন মাছ  শিকার করে কিছুটা ঐ রকম ভাবেই এরাও মাছের শিকার করে। মাছ ছাড়াও বিভিন্ন খোলস যুক্ত জলজ প্রাণী যেমন চিংড়ি, কাঁকড়া এরা খেয়ে থাকে ৷ সাপ, ইদুর, পাখির বাচ্ছা, পাখির ডিম কখনো কখনো জলজ পাখিও শিকার করে খায় ।

    [ পায়ে শিকার করা মাছ ধরে আছে ]

প্রজনন, Brown Fish Owl Breeding : নভেম্বর থেকে এপ্রিল এদের প্রজননের সময় । অন্যান্য পাখিদের মত যেহেতু এরা খড়কুটো দিয়ে বাসা বানায় না তাই বড় বড় গাছের প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট কোঠর অথবা পুরানো বাড়ির কোন ছায়াযুক্ত নিরিবিলি জায়গায় এরা বাসা করে। একটা অথবা দুটো ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্ছা বের হতে সময় লাগে ৩৫ - ৪০ দিন। দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে বাচ্ছা উড়তে শিখে যায়।


               [Courtship Feeding]

ছবি তোলার কিছু অভিজ্ঞতা , Photographic Experience : কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে। আমার ক্ষেত্রেও ওই কথাটি প্রযোজ্য । কাছেপিঠে যেখানেই বেড়াতে যাই বগলদাবা করে আমার ঐ ক্যামেরাটা নিয়ে যাই। সাল টা ছিল ২০১৮ , সেপ্টেম্বর মাস, এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে রান্না পূজোর নিমন্ত্রণ খেতে যাই। ঠিক করলাম রাত্রে ছবি তুলতে বেরব। একটা LED টর্চ নিয়ে ঐ বাড়ির এক সদস্যকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। রাতের ছবি তুলতে হলে ক্যামেরা সেটিংস আগে থেকে ঠিক করে নিতে হয়, আমিও আমার ক্যামেরার মডেল অনুযায়ী শুধুমাত্র সর্বোচ্চ ISO  রেখে ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়লাম। চারিদিকে ঘুরে এদিক ওদিক করে ঠিক ৯:৩০ নাগাদ আত্মীয় বাড়ির সামনের করঞ্জা গাছে  দেখি একটা বড় পাখি বসে আছে। দেখা মাত্রই টর্চের আলো ফেললাম, আলো পড়তেই পাখিটা উড়ে গিয়ে একটা দূরের কদম গাছে  গিয়ে  বসল, গাছটা ছিল একটা পুকুরের পাড়ে । প্রথম দেখছি একটু বেশিই আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম তাই ক্যামেরা সেটিংস সব ঠিক না করেই ছবি তুলতেই থাকি । খুব ভালো না হলেও রাতের ছবি হিসেবে মোটামুটি ঠিকই আছে। আবার ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে একবার আমি ও আমার 'গুরুজী' সোমেন ব্যানার্জী দাদাকে নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় বেরিয়ে পড়লাম বাইক নিয়ে আরো এক আত্মীয়ের বাড়ির কাছে পেঁচার ছবি তুলতে । কিন্তু গিয়ে দেখি পেঁঁচা নেই । অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পর হঠাৎ দেখলাম পেঁচাটা পায়ে করে মাছ ধরে এনে একটা বট গাছের ডালে এসে বসল । ওখান থেকেই মাছটা আবার মুখে করে  নিয়ে অন্য একটা অসত্থ গাছের ডালে এসে বসল। যে পাখিটার নামের সাথে Fish  কথাটা যুক্ত এবং তাকে যদি মুখে করে  মাছ নিয়ে দেখতে পাই এর থেকে আনন্দের আর কিছু হয়না। নিকট আত্মীয়কে নিয়ে আমরা বাড়ির ছাদে উঠে গেলাম, সেখান থেকে বেশ কতগুলো ছবি তুললাম। শেষে দেখলাম মুখে থাকা মাছটি খাইয়ে দিল অন্য একটি পেঁচাকে। প্রজননের মরশুম, প্রজননের  পূর্বে পুরুষ পেঁচা স্ত্রী পেঁচাকে খাইয়ে দেবার এই বিষয়টাকে বলে Courtship Feeding.  "পেয়ার কা ইজহার" ☺️ এই দৃশ্য দেখা এবং ফ্রেমবন্দি করতে পেরে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম। এই ব্যাপারে একটা কথাই বলা যায়....
"This one time experience,
Enough for a lifetime...." 


    [এই ছবিটি তুলেছি ২০১৮, সেপ্টেম্বর]






[সংরক্ষণ অবস্থা : নূন্যতম বিপদগ্ৰস্থ]

{To read it in your mother language, please use Google Translation from your PC browser}


***লেখাটি পড়ে ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার কমেন্ট করুন। আপনার এই মূল্যবান মন্তব্য আমার পরবর্তী লেখার প্রেরণা।
***

👇👇ইমেইল দিয়ে লগইন করে নির্দিধায় কমেন্ট করুন👇👇

Comments

  1. সুন্দর উপস্থাপন

    ReplyDelete
  2. দারুন দারুন 👌

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ 💓☺️

      Delete
  3. Darun darun. Onek tothho pelam dada. Asha korbo aro beshi porte parbo aro taratari. Akta suggestion amar theke, Jodi protita blog a protita animal er jonno tar jayga ar ki ki soronjam newa uchit seta jodi lekho aro bhalo hoy. Jodi camera setting er opor o kichu lekho.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks for your valuable suggestion. Abossoi likhbo.

      Delete
  4. Darun darun. Onek tothho pelam dada. Asha korbo aro beshi porte parbo aro taratari. Akta suggestion amar theke, Jodi protita blog a protita animal er jonno tar jayga ar ki ki soronjam newa uchit seta jodi lekho aro bhalo hoy. Jodi camera setting er opor o kichu lekho.

    ReplyDelete
  5. অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। অসাধারণ

    ReplyDelete
  6. অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। অসাধারণ

    ReplyDelete
  7. কিছু বলার নেই । আরো পড়তে চাই

    ReplyDelete
  8. Khub Valo laglo dada pore...
    Tomar likha guloi inspire kore amke tmr moto kichu korte...

    ReplyDelete
  9. অসাধারণ বর্ণনা ও অসম্ভব দুষ্প্রাপ্য ছবি

    ReplyDelete
  10. অসাধারণ ফটোগ্রাফি , সুন্দর উপস্থাপন ❤️👌👌

    ReplyDelete
  11. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  12. খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ ☺️💓

      Delete
  13. লেখার খুব সহজ ও প্রাঞ্জল নির্মাণের মাধ্যমে খুব সুন্দর উপস্থাপন। ছবিগুলো এককথায় অসাধারণ এবং লেখার পরিপূরক। অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ ☺️💓💕

      Delete
  14. খুব সুন্দর ছবি ও উপস্থাপনা

    ReplyDelete
  15. Outstanding..... Beautiful writing... Full of knowledge about this species.

    ReplyDelete
  16. Outstanding..... Beautiful writing... Full of knowledge about this species.

    ReplyDelete
  17. দুর্দান্ত উপস্থাপনা, তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ও টপক্লাস ছবি 👍

    ReplyDelete
  18. Darun sir... Khub vlo informative and interesting post... Waiting for ur more interesting post like this

    ReplyDelete
  19. Hello Ambar, thanks for continuing with your teachings, for me this species of owl was unknown, as well as its way of feeding, I did not know that there were owls that fished.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Me alegro de que te guste. Muchas gracias. Fue una experiencia increíble para mi. ☺️

      Delete
  20. Replies
    1. নাম টা এডিট করে নিজের নাম দিন Krishnendu Chakraborty Dada 🙏

      Delete
  21. এত সুন্দর একটি লেখা, এত নিখুঁত বর্ণনা একমাত্র নিজস্ব বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই সম্ভব। মনে হল আমরাও বোধহয় নিজের চোখে ব্যাপারটা দেখছি। এইরকম ঘটনা কোনদিন চাক্ষুষ করার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু এই যে মাছ খাওয়া দেখতে পেলাম এর জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন।

    ReplyDelete
  22. এত সুন্দর একটি লেখা, এত নিখুঁত বর্ণনা একমাত্র নিজস্ব বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই সম্ভব। মনে হল আমরাও বোধহয় নিজের চোখে ব্যাপারটা দেখছি। এইরকম ঘটনা কোনদিন চাক্ষুষ করার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু এই যে মাছ খাওয়া দেখতে পেলাম এর জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ। এই মন্তব্য পরবর্তী কালে লেখার উৎসাহ 🙏

      Delete
    2. অসাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ও ততোধিক সুন্দর ছবি। অপূর্ব যুগলবন্দি ।

      Delete
    3. অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা 🙏

      Delete
  23. Chhobi guli to onobodyo botei.....lekhao khuub bhalo laglo.....aro onek species niye eirokom chhobi somet lekha chai

    ReplyDelete
  24. Dada, tumi banglar pencha der upor akta gota page likho, bishesh kore tader favourable diet and favourite trees jate ami oder conservation er jonno kichhu effort korte pari.

    ReplyDelete
  25. খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম ও সমৃদ্ধ হলাম

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Indian Pitta, দেশি শুমচা, नवरंग, Pitta brachyura.

Chestnut-capped Babbler (লালটুপি ছাতারে) Timalia pileata.